অনিকেত

 


তারপর পুড়তে পুড়তে লোকটা একদিন ছাই হয়ে গিয়েছিল। যেমন ব্রহ্মাণ্ডের প্রকাণ্ড তারাগুলো প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একদিন আপাতভাবে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিশাল বালিয়াড়ীর তীরে উটপাখীর দল বালিতে মুখ ঢেকে বসেছিল। পড়ন্তবেলার নেভা নেভা আলোয় ছাতারে পাখির দল তখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলেছিল। মৃদুমন্দ বাতাসের আলগা দোলায় শুক-সারি প্রণয়ে মত্ত ছিল। আর লোকটা পুড়ছিল। 

লোকটা পুড়ছিল আর ফ্রিজ শটে থাকা মহাকালের তর্জনী অপরাধী সনাক্ত করছিল মধ্যমেধার মেরুদন্ডহীন পচা গলিত নিটোল আদুরে মেদুর চুক্তিবদ্ধ কৃষ্টির আগত ও অনাগত স্রষ্টাদের যতিচিহ্নহীন বাক্যবন্ধের মাধ্যমে 

লোকটা মূহুর্ত লিখত। যেমন সৃষ্টির ঊষালগ্ন উথালপাথাল মূহুর্তকে ধরে রাখে। অথবা তান্ডবের তালে তালে নটরাজ যেমন অপস্মারকে রাখেন তাঁর পদতলে। লোকটা প্রবন্ধ আঁকতো - যেন স্বয়ং মহাকালের স্বাক্ষর ইতিহাস বইয়ের পাতায় পাতায়। লোকটা দর্শন শানাতো। যেন উপনিষদের ঋষি জীবন-মৃত্যুর দ্যোলাচলে লিখে যান জীবনের সারাংশ। লোকটা শব্দ বুনতো। যেন পাহাড়ী নদীর ঝর্ণার কুলুকুলুতে প্রাণ পায় পাইন বন। লোকটা কান্না বাইত - যেন মাতৃবিয়োগের পর সদ্যজাত শিশু৷ লোকটা ছবি করতো। 

যেমন ছবি চরাচরে ত্রিভূবনে আর কেউ কখনো বানায় নি। লোকটা মাতাল ছিল এবং ঋষিও। আবেগবান কিন্তু যুক্তিবাদী। শক্তিশালী এবং দুর্বল। সাত্ত্বিক আবার তামসিক। লোকটার শিকড় ছিল জন্মভূমিতে কিন্তু ছিন্নমূল। পরিচয়ও ছিল একটা। মান্টোর বইয়ের পাতা থেকে পূর্বদিকে পারি দিলে দুদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের মাঝে যে লাশ দেখতে পাবেন, তার বুকের ওপর রক্তে খোদাই করা স্বোচ্চার স্বাক্ষর - শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক। 

লোকটা পুড়ে গেছিল। শুধু অবিভক্ত বাংলাদেশ সজল চোখে অপেক্ষায় বসেছিল ফিনিক্স পাখির গল্পটা ভুল নয় এই বিশ্বাসে।

Comments

  1. টানটান সুন্দর ছোট্ট লেখা

    ReplyDelete

Post a Comment