খসখসে মেটে মেটে রং। ভাঁটার মতো লালচে চোখ। কাঁচা-পাকা-খয়েরি চুল-দাড়ির দুর্ভেদ্য জটিল জ্যামিতি। পরনে চিট ময়লা ঘিয়ে ঘিয়ে খদ্দরের পান্জাবী আর গোড়লির নীচে ল্যাৎপ্যাৎ করতে থাকা ফুটো ফুটো জিন্সের নীলচে প্যান্ট। বোধহয় মরা সাহেবের থেকেও দেড় শতাব্দী পুরোনো। একটা রোঁয়া ওঠা কুটুকুটে দেখতে কম্বলও ছিল - হয়তো উপচে পড়া খয়রাতির হাটে কোনো একবার উপেক্ষার কোনো একটা হাত যান্ত্রিকভাবে গছিয়ে দিয়েছিল। সেটা কখনো শাল হিসেবে ব্যাবহার হতো। কখনো বা বিছানার গদি। মোটামুটি এই ছিল তার ফ্রিজ শটখানা।
শীতের শেষাশেষি কোথ্থেকে যেন সে উদয় হতো। সকালের নরম মিঠে রোদে চায়ের দোকানের সামনে রাখা নিউট্রিয়েন্ট আর ভিটামিনধন্য বাজার ফেরত থলিরা বলাবলি করতো - পাগলাটা এসে গেছে। কে জানে! সাইবেরিয়াগামী পরিযায়ী পাখিরাও হয়তো এই সময় তাদের হাতঘড়ি মিলিয়ে নিত। কিংবা উত্তরায়ণমুখী সূর্যও। প্রকৃতির অনিবার্য নিয়মখেলায় ব্যতিক্রমের তো কোনো জায়গা নেই, তাই সে আসতো। ক্লান্ত ডালিয়া-চন্দ্রমল্লিকা আর অস্ফূট শিমূল-পলাশের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন করতে। আস্তাকুড়ে ছিবড়ে ছিবড়ে কমলালেবুর খোসা আর সজনে ডাঁটার ধূলোখেলা দেখতে। তারপর পাড়ার মোড়ের প্রকান্ড বটগাছের সব ঝরাপাতাগুলো তুলে নিয়ে হঠাৎ একদিন সে আবার বেপাত্তা।
গলির মোড়ের রোয়াকে একপাল কুকুরের সঙ্গে দেয়ালা করতে করতে তার অস্থায়ী জীবনযাপন। ফাটা ফাটা সিমেন্টের মেঝের ওপর রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেওয়া ইঁটের টুকরো দিয়ে আঁকা আঁকা দুরূহ জ্যামিতি। এবাড়ি ও বাড়ির উচ্ছিষ্ট আর কর্পোরেশনের জল - এইটুকুই জীবনধারণের উপকরণ। উবু হয়ে বসে পশ্চিমা রোদ মাখতে মাখতে কি যেন বিড়বিড় করতো। যেন বছরের হিসেব নিকেষের জীবন্ত খাতাখানা।
তারপর রাত নামতো। গভীর রাত। অসহিষ্ণু মধ্যবিত্ত গাড়ীগুলোর ধূর্ত আকুলিবিকুলির পরিবর্তে তখন দামাল লরিদের চাপা গর্জন। লরির হেডলাইট আর ধোঁয়াশার মিশেলে বড় রাস্তায় তখন ঘুমঘুম পূর্ণিমা। সেই আলোর জোছনা মাখতে মাখতে লোকটা তখন বড় রাস্তা এপার ওপার করতো। টান মেরে উপড়ে দিত উত্তরে হাওয়ার বিষদাঁত।
নাম তার হয়তো একটা ছিল। কেউ কখনো তাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করে নি। কেউ বলতো পাগল। কেউ বা ছেলেধরা। কেউ বা অভিধানভুক্ত কিংবা অভিধান বহির্ভূত নিম্নবাচ্য চার পাঁচ অক্ষরের শব্দাবলি দিয়েই কাজ চালাত। শহর কিন্ত তার নাম রেখেছিল বসন্ত।
সে সুন্দর ঝরঝরে সাবলীল লেখা, খুব ভাল লাগলো
ReplyDelete