কিছু কিছু বিষয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর পরমকল্যাণকামী রূপটি সম্পর্কে বড়োসড়ো প্রশ্নচিহ্ন রেখে যায়। যেমন ধরুন, ইডেন সাহেবের বাগানে ম্যানেজারি করার সময় আপেল সম্পর্কিত তাঁর বিচিত্র ফতোয়াটি। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ঈশ্বর যদি সত্যিই পরমকল্যাণকামী ও সর্বজ্ঞ হতেন, আমি নিশ্চিত, তাঁর নিষেধ থাকতো ফুচকা কিংবা আলু-কাবলি তে। নিদেন পক্ষে, তাঁর দুর্সম্পর্কীয় নেটিভ সহকর্মী সরস্বতীদেবীর খাতিরে, মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমীর আগে টোপাকূল খাওয়ায়।
তবে নিষেধ আপেলেই থাকুক আর ঝালনুনে, স্যাটেনিক ভার্সেসে কিংবা পর্ণোগ্রাফিতে, আ্যাডামদাদু থেকে হালফিলের আম পাবলিক তা হাঘরের মতো গিলবেই। ইতিহাস, পুরাণ আর মনস্তত্ব আমাদের সেই দৃষ্টান্তই দেয়। সে কথা দেব-দেবী-রাজা-মহারাজা-মন্ত্রী-সান্ত্রী-কোটাল-পেয়াদা সব্বাই যুগ যুগ ধরে জানেন। আর জানতেন আমাদের গুরুজনেরা।
ছোটবেলার নিষেধের লিস্টটি বড়ো কম নয়! খেলার সময় নিক্তি মেপে হিশেব করা। বেরনোর সময় "যাচ্ছি" বলতে নেই, "আসি" বলতে হয়। বড়োদের মধ্যে কথা বলতে নেই। পা দোলাতে নেই। ব্যাড ম্যানার্স! রাস্তার আলো জ্বলার আগে বাড়িনা ঢুকলেই রাখাল। ভাতের থালায় আঁকিবুঁকি কাটা অশুভ। ঠেলার আইসক্রিম যে নালির জল দিয়ে তৈরী, এ উদ্ভাবনা যে কার মস্তিষ্কপ্রসূত - তা জানা নেই; তবে এ বহুল প্রচলিত ফেক নিউজটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অভিভাবকদের বিশেষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য, সেটা বোঝার জন্য পোস্ট ট্রথ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলেও চলে। সকালে উঠিয়া মনে মনে গুডবয় হওয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রতিদিন গুরুজনদের দিতে হতো, তা নীতিশিক্ষার থেকে বিদ্রোহের জন্ম দিত বেশী।
দেবতাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অলিম্পাস পর্বত থেকে আগুন চুরি করে মানুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রমিথিয়াস। সেই ট্র্যাডিশন মেনেই ছোটবেলার দিনগুলোতে পাঠ্য বইয়ের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় ঝলমলে আলো দিতেন কূলদারঞ্জন বা লীলা মজুমদার। দুপুরবেলা ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়ার পর পুষ্টি যোগাতো ডাঁশা পেয়ারারা। স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে তিনতলা থেকে ছুঁড়ে দেওয়া পাউরুটির টুকরো ছোঁ মেরে নিত চিল। পাশের বাড়ি থেকে রেডিও তে শোনা যেত ডিস্কো ড্যান্সারের গান। শেষ বিকেলে পশ্চিম আকাশে কোথা থেকে যেন একটা অলৌকিক আলো এসে সময় করে দিত আরো একটা ওভারের। আর মাঝে মাঝে টকটকে কমলারঙের পঁচিশ পয়সা দামের আইসক্রীমের ভাগ দিত বন্ধুরা।
।। ২২শে ডিসেম্বর ২০১৮ ।।
।। আসানসোল ।।
Misti. Onek purono smriti uske dilo. Jome thaka onek prosno gulo arekbar korli.
ReplyDelete