আজ ৯ এর কথা লিখতে বসেছি। ভাবছেন এ আবার কি নতুন প্যাঁচ? কোনো সাংকেতিক ভাষার সুলুকসন্ধান নাকি দু্র্বোদ্ধতার গহীন বনে এট্টু উঁকিঝুঁকি? অথবা আপাত নির্বিষ কোনো হিশেব- নিকেষের অভিসন্ধি? 

মনস্তত্ত্ব ও সংখ্যাতত্বের ঘূর্ণাবর্তে আপনার গভীর ছল্যাং দেয়ার আগে একটু খোলসা করেই বলি তাহলে। আজ ৯ এর কথা বলবো। যিনি ঋষি মশাই আর এক্কাগাড়ীর মধ্যে অবস্থান করে আমাদের শৈশবকে সমৃদ্ধ করেছেন - সেই ৯। ডিগবাজি খাওয়া ছাড়া আর কোনো কৃতিত্বের দলিল কোনো পন্ডিতই পেশ করতে পারেন নি। সেই আদি অকৃত্রিম লি-কার। 

এখন লিকার শুনে আপনার হয়তো চায়ের কথা মনে হবে। কাছেপিঠে গৃহিনী না থাকলে হয়তো অন্য কিছুর। কারণ আমি নিশ্চিত এই লি-কার আপনার গৌরবময় সুখী জীবনের ওপর কোনোকালেই কোনো প্রভাব ফেলে নি। এমনকি আপনার বা আপনার নিকটাত্মীয়ের সদ্যোজাত ছেলেটি বা মেয়েটির জন্য যখন আপনি হাঁকুপাঁকু করে অশ্রুতপূর্ব তৎসম কোনো নাম অনুসন্ধান করেছেন হরিচরণ বা সুবল মিত্তিরের পাতায় পাতায়, তখনো ৯ আপনার রাডারের বাইরেই। অনুস্বর বা বিসর্গর কথা হয় তো যদি বা ভেবেছেন, নামকরণের নোবেল প্রাইজটি বাগাবেন বলে। কিন্তু ৯? নৈব নৈব চ। ভেবে দেখুন, আপনার আগত ও অনাগত বাঙ্ময় এজীবন এক্কেবারে ৯ হীন। 

এর দেখা একমাত্র মিলবে আপনার শৈশবের ব্রাহ্মমূহুর্তে। যখন বটতলায় ছাপা হাল্কা বেগুনী রঙের বর্ণপরিচয়, খাগের কলম আর স্লেট পেন্সিলে আপনার হাতেখড়ি হয়েছে কোনো এক মনকেমনন করা শুক্লা পন্চমীতে। যখন কাঠের তৈরী খেলনা স্বরবর্ণগুলো আপনি সবে সঠিক ভাবে সাজাতে শিখেছেন বাড়ির মেঝেতে আর তাই দেখে হাততালি দিয়ে উঠেছেন আপনার মা। যখন স্লেটের ওপর গুরুজনদের লিখে দেওয়া অক্ষরগুলোর ওপর আপনার দুর্বল আঁকাবাঁকা রেখাগুলো জানান দিতে শুরু করেছে এক সুখী ভবিষ্যতের। জীবনের সেই কাকভোরে ৯ আপনার দৈনন্দিন সঙ্গী।  

তারপর স্বরবর্ণ, ব্যন্জনবর্ণ, যুক্তাক্ষর, অমিত্রাক্ষর, চারঅক্ষর পেরিয়ে আপনি ভেলা ভাসিয়েছেন গড্ডালিকা প্রবাহে। জীবনের নানা বিপজ্জনক বাঁকে হাল সোজা রাখতে রাখতে, পিছলে যাওয়া স্বপ্নগুলোর সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আপনি হয়তো ভুলেই গেছেন ৯ এর কথা।  

ঠিক যেমন প্রায় ভুলে গেছেন আপনার বংশের প্রাচীনতম মৃতপ্রায় বৃদ্ধাটির কথা - যাঁর একমাত্র অবস্থান ছাপার অক্ষরে চতুর্থ প্রজন্মের কারোর অন্নপ্রাশনের কার্ডের বিনীত অনুরোধে। অথবা আপনার সেই দূ:সম্পর্কীয় আত্মীয়ের কথা - যাঁর পেশা ছিল উমেদারি। পয়লা বৈশাখ বা বিজয়ায় আপনার সাজানো সংসারে যাঁর আসা এবং যাওয়া দুইই নতুন নতুন দৃশ্যকল্প রচনা করতো নিরন্তর অপমান বুকে নিয়ে বেড়াবার। অথবা পাড়ার মোড়ের দাশুপাগলার কথা। সাতের দশকে স্বপ্নে পাওয়া সমাজ দেখতে দেখতে কে যেন তার মাথায় পুরে দিয়েছিল কোনো এক সম্মোহিনী মন্ত্র। সে আজো উবু হয়ে বসে শীতগ্রীষ্মনির্বিশেষে দিনবদলের স্বপ্ন দেখায় অপরিচিত পথচারীদের - বিরামহীন বিড়ির ফাঁকে ফাঁকে। 

ফিরবেন নাকি আরো একবার কাকভোরে? আরো একবার করবেন নাকি বর্ণপরিচয়? নেবেন নাকি একটা খোঁজ ৯ দের? পয়লা বৈশাখ বা বিজয়ার অছিলায়? 

।। আসানসোল ।।
।। ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।।

Comments